পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে। বসন্ত এলে চারদিকে ফুলে
ফুলে ভরে যায়। প্রকৃতি রঙ্গিন রঙ্গে সাজে। মনের মধ্যে আনন্দ বয়ে য়ায়। পাখিদের
কলকাকলিতে চারদিক মুখরিত হয়। বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন বাঙালীরা বসন্ত
উৎসব পালন করে। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি বাসন্তি রঙের কাপড় পরে আনন্দে
মেতে উঠে। আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশা ও
বয়সের মানুষ।
বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, উৎসব মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক। মেলায় বসে বিভিন্ন
ধরনের দোকান। পাওয়া যায় নানা ধরনের জিনিস পত্র ও খাবার। মেলায় পাওয়া যায়
বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি। প্রিয়, পাঠক আপনি যদি এই লেখাটি শুরু থেকে
শেষ পযর্ন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি পহেলা ফাল্গুনে
বাঙালীর বসন্ত বরণ উৎসব সম্পর্কিত অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথের সময় থেকেই পশ্চিম বঙ্গের শান্তিনিকেতনে
বসন্ত উৎসব পালন হয়ে আসছে। বাংলাদেশে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে শুরু হয়
বসন্ত বরণ উৎসব পালন। সেই থেকেই বসন্ত বরণ উৎসব কমিটি প্রতি বছর
বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। সমাজিক বিভিন্ন প্রিতিষ্ঠান বসন্ত বরণ
উৎসব পালন করে থাকে। বসন্ত বরণ উৎসবে আয়োজন করা হয় বর্ণিল
শোভাযাত্রার। এ শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার
মানুষ।
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণ উৎসব পালন করা
হয়। বাংলাদেশের জাতীয় বসন্ত উৎসব বরণ কমিটি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমন্ডির রবিন্দ্র
সরোবরে উমুক্ত মঞ্চে পালন করে। শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীরা
সাজে বাসন্তি রঙের বর্ণিল সাজে। চারিদিকে থাকে এক উৎসব মূখর
পরিবেশ। ভোরে সূর্য্যদয়ের সাথে সাথে তারা নেমে আসে রাস্তায়।
প্রথমেই শুরু হয় শোভাযাত্রা দিয়ে বসন্ত বরণ উৎসব পালন।
ফাল্গুন মাসের বর্ণনা
বাংলা মাঘ মাসের পরে আর চৈতের মাসের আগের মাসই হচ্ছে ফাল্গুন
মাস। ফাল্গুন মাসে গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়। ফুলে ফুলে ভরে
উঠে চারদিক। প্রকৃতি অপরুপ রুপে সাজে। পাখিরা মনের আনন্দে গাছে
গাছে গান করে। আমাদের মনে দোলা দিয়ে যায় প্রকৃতির অপরুপ
সৌদর্য্য। শীত ঋতু শূন্য হাতে বিদায় নেয় আর বসন্ত ফুলে ফুলে
প্রকৃতিকে সাজিয়ে চারদিক রঙিন করে আগমন ঘটায়। এ যেন প্রকৃতির
এক সৌন্দর্য্যমন্ডিত অপরুপ রুপের বাহার।
কবিরা মনযোগী হয়ে উঠে ফাল্গুন নিয়ে কবিতা আর গান
লিখায়। তাইতো কবি লিখেছেন “ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানি,
ভোমরাটা গায় গান ঘুম ভাঙ্গানি”। শিশু-কিশোর, যুবক- যুবতিরা
বাসন্তি রঙ্গের পোশাকে নিজেদের রাঙিয়ে তোলে। যুবতিরা
বিভিন্ন রঙের ফুল দিয়ে নিজেদের সাজিয়ে তোলে। চারিদিকে পড়ে
যায় সাজ সাজ রব। বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। কবি গান আর বাউল
গান চলে রাতভর।
বসন্ত বরণ উৎসব কিভাবে পালন করা হয়
পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে। বসন্ত বরণ
উৎসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পালন করা
হয়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা সহ বিভিন্ন অনুষদ এই
অনুষ্ঠান পালন করে। এছাড়াও বাংলাদেশের বসন্ত বরণ উৎসব উৎযাপন
কমিটি চারুকলার বকুলতলায় ও ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরোবরের উমুক্ত
মঞ্চে বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে।
ছেলেরা পরে পাঞ্জাবি আর মেয়েরা পরে বাসন্তি রঙের শাড়ি।
সারাদিন নেচে গেয়ে তারা বসন্ত উৎযাপন করে। মেলাসহ বিভিন্ন
দর্শণীয় স্থানে লোকে লোকারন্ন হয়ে উঠে সারাদিন। মেলাতে বসে
বাহারি পণ্যের দোকান। এসব দোকানে পাওয়া যায় মনোহরি বিভিন্ন
ধরনের পণ্য। পিঠা পুলির দোকান বসে মেলায়, পাওয়া যায় বিভিন্ন
ধরনের পিঠা। বাড়িতে বাড়িতে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের
পিঠা-পুলি। সকলে মিলে আনন্দে বরণ করে নেয় বসন্তকে।
বাঙালী জাতি উৎসব প্রিয় জাতি। উৎসবে তাদের চাই নতুন
পোশাক। আর ফাল্গুনে তো সবারই নতুন পোশাক চাই। শিশু -
কিশোর,যুবক-যুবতি সবাই নিজেকে নতুন পোশাকে সাজাতে চায়।
এই একটি দিন কে ঘিরে তারা আনন্দে মেতে উঠে। মেয়েরা বাসন্তি রঙের শাড়ি পড়ে। আর ছেলেরা
পরে পাঞ্জাবি-পায়জামা বা ধূতি। তারা মেতে উঠে বিভিন্ন ধরনের খেলায়।
নারী,পুরুষ, শিশু, কিশোর সকলে মিলে মেতে উঠে এক
অনাবিল আনন্দে।
মেয়েরা খোপায় পড়ে ফুল, হাতে পরে রং বে-রঙের চুড়ি আর
ছেলেদের হাতে থাকে বিভিন্ন রঙের ফুল। সরাদিন তারা ঘুরে
বেড়ায় আর আনন্দে মেতে থাকে। মেলায় বসে বিভন্ন ধরনের
দোকান। দর্শনার্থীরা কিনে তাদের পছন্দের জিনিষ। উপহার
দেয় তাদের প্রিয়জনকে। তাদের পোশাকে আশাকে এক আনন্দঘন
পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ যেন বাঙালি জাতীর এক আনন্দ
উৎযাপনের ক্ষণ।
বসন্তকে নিয়ে কবিদের ভাবনা
বসন্ত হচ্ছে প্রেমের ঋতু। তাইতো বসন্ত নিয়ে কবিদের
উম্মাদনার যেন শেষ নেই। তারা কবিতা লিখে গান লিখে এই
ঋতুকে কেন্দ্র করে। তাই তো আমরা রবিন্দ্রসঙ্গিতে শুনতে
পাই ”আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে কত পাখি
ডাকে”। তাইতো, কবিদের পাশাপাশি পহেলা ফাল্গুনে
বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে। বসন্ত নিয়ে অনেক
কবি অনেক কবিতা লিখেছেন। বসন্ত এল তাদের চিন্তা ভাবনায়
চলে আসে ভালবাসার রঙ।
তাইতো কবি সাহ্যিতিকরা হয়ে উঠে আবেগ প্রবন। বসন্ত
নিয়ে তারা রচনা করে প্রেম ভালবাসার কবিতা ও গান।
বসন্ত ঋতুর আগমনে কবি সাহিত্যকরা যেন উৎজীবিত হয়ে
উঠে। তাদের মনে দোলা দেয় প্রেম ভালবাসা। তাইতো
তারা গেয়ে উঠে ককিলের মত গান। লেখনিতে ফুঠে উঠে
প্রেম ভালবাসা আর প্রকৃতির অপরুপ
সৌন্দর্য্য।
বসন্তে বসে পুুস্প মেলা
পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে।
বসন্ত হচ্ছে ফুলের ঋতু। চারিদিকে বিচিত্র রঙের ফুল
ফোটে। বসন্ত কাল তাইতো পুস্প প্রেমিদের জন্য নিয়ে আসে
পুস্প মেলা। যেখানে বিচিত্র রঙ ও গন্ধের ফুল গাছের
সমারহ ঘটে। এখানে মানুষ এসে কিনে নিয়ে যায় তার তার
পছন্দের ফুল গাছ। এই মেলায় পাওয়া যায় বাহারি রঙের ফুল
ও ফলের গাছ। ফুল নিয়েই যেন শুরু হয় বসন্ত। আর
তাই বসন্তে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় চারদিক। তাইতো পুস্প
প্রেমিদের নিয়ে বসে পুস্প মেলা।
পুস্প মেলায় গেলে মনটা আনন্দে ভরে যায়। চারদিকে শুধু ফুল
আর ফুল গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, ডালিয়া, কসমস আরও নাম না
জানা কত ফুল। আমি একবার গিয়েছি এই ধরনের ফুলের মেলায়।
যেখানে আমর প্রিয় হলুদ ও কাল গোলাপের দেখা পেয়েছি। আপনার
এলাকায় ও হতে পারে পুস্প মেলা। তাই আর দেরি না করে চলুন
এবার বেড়িয়ে আসি পুস্প মেলা থেকে।
বসন্ত ঋতুর বৈচিত্রময়তা
আমাদের দেশ ষড় ঋতুর দেশ। এখানে সারা বছরবৈচিত্রময় আবহাওয়া বিরাজ
করে। গ্রীস্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এই ছয়টি ঋতুর মধ্যে
সবচেযে শান্তিদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করে বসন্তে। শীতের শেষে আসে বসন্ত। সে সময় না
ঠান্ডা না গরম এমন একটি আবহাওযা থাকে। দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়
হাল্কা বাতাস। সে যেন এক বিচিত্র রকমের সুন্দর আবহাওয়া বিরাজ করে
চারদিকে।
পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে।বসন্তকে বলা হয়
ঋতু রাজ। বসন্তের আগমনে চার দিকে সাজ সাজ রব পড়ে। গাছে গাছে ফুল ফোটে
ডালে ডালে পাখ পাখপাখালিরা গান গায়। বসন্তে গাছ গাছালিতে বসে পাখিদের মেলা।
কোকিল, বুলবুলি,দোয়েল,শ্যামা,শালিক পাখিদের মেলা বসে। কোকিলের কুহু কুহু রবে
চারদিক মাতোায়ারা হয়ে উঠে। কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এক অপরুপ সৌন্দর্য্যের লিলাভূমি। এ দেশে ঋতু
রাজ বসন্তের আগমন ঘটে প্রকৃতিক সৌদর্য্য নিয়ে। বসন্ত ঋতুর আগমনে প্রকৃতি এক
বর্ণিল রুপ ধারন করে। চারদিকে শুধু নয়নাভিরাম অপার সৌদর্য্য। যে দিকে দু চোখ
যায় নয়ন জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতি এক নতুন রুপে সাজে। গাছে গাছে শোভা পায় বাহারী
রঙের ফুল। ডালে ডালে পাখি গান গায়।
প্রকৃতি ধারন করে এক বাহারী সৌদর্য্যমন্ডিত অসাধারণ রুপ। যে রুপের ছোয়া
লাগে প্রাণিকূলে। এই কারণে বসন্তকে বলা হয় ভালবাসার ঋতু। চারিদিকের সৌদর্য্য
দেখে প্রাণিকূলের মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভালবাসা। এ ভালবাসা ছড়িয়ে পরে মানুষের
মাঝে। তারা আকৃষ্ট হয়ে পরে পরস্পরের প্রতি। সৃষ্টিকর্তার এক অপার মহিমার শান্তি
ছড়িয়ে পরে জীব জগতের মাঝে।
বসন্তে কি কি ফুল ও ফল পাওয়া যায়
বসন্তে ফোটে কত না রঙ বেরঙের ফুল। চারিদিকে তাকালে শুধু গাছপালার ডালে
ডালে চোখে পরে রঙিন ফুলের সমাহার। যেদিকে দুচোখ যায় জুড়িয়ে যায়। বসন্তে
ফোটে কনক চাপা, মাধবিলতা, কবরী, বুনো টগর, আষাঢ়ি লতা,দাঁতরাঙা, মুচকুন্দ,
বরুন ইত্যাদি আরো অনেক রকমের বাহারী ফুল। এ সকল ফুলের রুপে গন্ধে
মাতোয়ারা হয়ে উঠে চারদিক।
গ্রীস্মকালে ফলের যে প্রাচুয্যে থাকে তার পূর্বপ্রস্তুতি শুরু হয় বসন্তে।
বসন্তেই শুরু হয় গাছে গাছে ফুল ফোটা। প্রকৃতির সম্ভারে ফুলের
সৌন্দয্য ও সৌরভ নিয়ে বসন্ত আসে। বসন্তে ফলের মধ্য পাওয়া যায় তরমুজ,
খরমুজ, ফুটি, বাঙ্গি ইত্যাদি। বসন্ত যেন নিয়ে আসে সুমিষ্ট ফলের আগমনী
বার্তা। বসন্তে যেমন চারদিকে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, তেমনি বসন্তের পরে
গ্রীস্মকাল নিয়ে আসে সুমিষ্ট ফলের ঝুড়ি।
পরিশেষে আমার মতামতঃ
পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে এটা বাঙালী সমাজের
বহুদিনের চিরাচরিত নিয়ম। বাঙালী সংস্কৃতি ধারন করতে চাইলে আমাদের অন্যান্য
উৎসবের মত পহেলা ফাল্গুন উৎসব পালন করতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বিদেশী
সংস্কৃতি থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে, অবশ্যই আমাদের সন্তানদের পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
পাঠক, পরিশেষে বলতে চাই আমার লেখা পহেলা ফাল্গুনে বাঙালীরা
বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে, পড়ে আপনার যদি সামান্যতম উপকার হয় তাহলে আমার
কষ্ট সার্থক হবে বলে আমি মনে করি। কোন মতামত থাকলে লিখতে পারেন নিচের
কমেনন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url