শিশুদের মানসিক বিকাশে করণীয়

শিশুদের মানসিক বিকাশের করণীয় বিষয়গুলো আমাদের সকলের জানা একান্ত দরকারি। আজকের শিশু আগামীর যোগ্য নাগরিক। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য লেখা-পড়ার পাশাপাশি অনন্দ বিনোদন ও প্রয়োজন। শিশু লেখা-পড়ার মধ্য আনন্দ না পেলে সেই শিক্ষা তার কাছে ভাললাগেনা, ফলে সে ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রতি আনন্দ হারিয়ে ফেলে। একসময় সে আর বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননা। তাই আমাদের উচিত তাদেরকে আনন্দদানের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া।




তাই আশা করি লেখাটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত পড়ুন। তাহলে, আপনি জানতে পারবেন আপনার শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য আপনি কি করবেন, আপনার কি কর উচিত।

পোস্ট সূচিপত্রঃ 

শিশুদের মানসিক বিকাশে আনন্দ বিনোদন

শিশুরা সব সময় কমলমতি হয়। হাসি-খুশি থাকতে ভালবাসে। তারা সবসময় চায় আনন্দে থাকতে। তাই আনন্দ বিনোদনই শিশুদের মানষিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুদের বলা হয় ফুলের মত পবিত্র। তাদেরকে যেভাবে গড়ে তুলবেন তারা ঠিক সেভাবেই বড় হবে। তাদের কে আনন্দের মাধ্যমে সব কিছু শিখাতে হবে।
দূরে থাকে। 

বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক মায়েরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা তাদের সন্তানদের দেখভাল ঠিকমত করে না। ফলে শিশুটি বড় হতে থাকে অবহেলায়, তার ইচ্ছামত। তার মানসিক বিকাশ বাধাঁগ্রস্থ হয়। সে ধিরে ধিরে সব কাজের মধ্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। 

আরো পড়ুনঃ শিশুদের শীতকালীন রোগ সম্পর্ক জানুন


শিশুদের মানসিক বিকাশে খেলা-ধূলা

শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য  খেলা-ধূলা বড় ভূমিকা পালন করে। খেলা-ধূলা করলে যেমন শারীরিক বিকাশ হয়, তেমনি মানসিক বিকাশও হয়ে থাকে। শিশুরা খেলা-ধূলার সময় অন্যান্য চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে ধাকে। ফলে তারা বিভন্ন ধরনের নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে থাকে। 

আজকাল অনেক শিশুরাই মোবাইলের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমরা তাদেরকে খেলা-ধূলার প্রতি আগ্রহী করে ‍তুলতে পারছিনা।  যে সময়টা একজন শিশুর খেলতে যাওয়ার কথা সে সময়টা সে মোবাইলের পিছনে ব্যয় করছে। আমাদের উচিৎ তাদের কে নিয়মিত খেলা-ধূলা সহ বিভিন্ন চিত্র বিনোদনের সু-ব্যবস্থা করে দেওয়া। 

শিশুদের মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভূমিকা

সমাজিক বিজ্ঞানিরা বলেন “শিশুর সমাজিকী করণের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে পরিবার”। আর এই পরিবারের মূল ভিক্তি হচ্ছে মা-বাবা। শিশুরা সর্বপ্রথম তার মা-বাবার কাছ থেকে শিখে। তাই আমরা যদি আমাদের শিশুদের মানসিক বিকাশ চাই তাহলে আমাদেরকে শিশুদের সাময় দিতে হবে। তাদের চাহিদা জানতে হবে। তাদেরকে ভাল এবং মন্দের পার্থক্য বোঝাতে হবে।

শিখাতে হবে আদব-কায়দা, আচার আচরণ এবং সাস্থ্য সর্ম্পকে সচেতন করতে হবে। একজন শিশুকে তার মা-বাবাই পারে সুন্দর করে গড়ে তুলতে। শিশুরা হচ্ছে কাঁদা মাটির মত তাকে আপনি যে শেপে গড়তে চান সে সেই সেপেই গড়ে উঠবে। তাই আমরা যদি আমাদের শিশুদের ভাল চাই শিশুদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই তাহলে তাদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।  

আরো পড়ুনঃ শিশুদের শারীরিক বিকাশে করণীয়


শিশুদের মানসিক বিকাশে সমাজের ভূমিকা

মানুষ সমাজিক জীব। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না মানুষ ও তেমনি সমাজ ছাড়া বাঁচতে পারেনা। তাই শিশুর মানসিক বিকাশে সমাজের ভূমিকা অপরিসিম। শিশুরা অনুকরণ প্রিয় হয়ে থাকে। তারা দেখে দেখে শিখে। তারা শিখে তার চারপাশের মানুষ জন এবং তার খেলার সাথি ও পড়ার সাথিদের কাছ থেকে। 

কথায় আছে “সত সঙ্গে স্বর্গবাস অসথ  সঙ্গে সর্বনাশ” অনেক সচেতন মা-বাবাকে দেখেছি তারা পরিবেশ ভাল না বলে সন্তানদের ভালোর জন্য এলাকা পরির্বত করতে। যেহেতু শিশুরা তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শিখে তাই ভাল সমাজিক পরিবেশে থাকলে শিশু ভাল শিখবে আর খারাপ পরিবেশে থাকলে শিশু খারাপ কিছু শিখবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না।

শিশুদের মানসিক বিকাশে পরিবার

আমরা আগেই জেনেছি শিশুর সমাজিকীকরণের মূল মাধ্যম হচ্ছে পরিবার। পরিবার আবার দুই ধরনের হয়। যৌথ পরিবার এবং একক পরিবার। যৌথ পরিবারে থাকে দাদা-দাদি, মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাছি, ফূপু। একক পরিবারে থাকে বাবা মা-বাবা এবং ভাই বোন। সাধালণত আমদের দেশে যারা গ্রামে বাস করে তারা যৌথ পরিবারে বাস করে।

শহরের পরিবারগুলো সাধারণত  একক পরিবার হয়ে থাকে। একক পরিবারে শিশুরা মা-বাবার পাশাপাশি বড় ভাই-বোন মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যৌথ পরিবারে শিশুদের মানসিক বিকাশে মা-বাবর পাশাপাশি দাদা-দাদি, চাচা ও  ফুফূরা  শিশুর মানসিক বিকাশে গুরত্বপূর ভূমিকা পালন করতে পারে।  

শিশুদের মানসিক বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শিক্ষদের বলা হয় জাতির মেরুদন্ড। বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলগুলো শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সৃজনশীল চিন্তা শক্তি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যে দেশের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশের শিক্ষার্থীরা তত বেশি মেধাবী।

তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিশুর মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে। উন্নত দেশগুলোতে প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।  কারণ শিশুদের শিখনের ভিক্তি একবার গড়ে উঠলে উপরের শ্রেণিতে আর কোন সমস্যা হয না। তাই  তারা নিচের  শ্রেণিতে বেশি যত্ন করে। একটি কথা সবসময় মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীদের উপর কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবেনা। তাদের শেখাতে হবে আনন্দদানের মাধ্যমে।

শিশুদের মানসিক বিকাশে খাবার

জীবনধারনের জন্য আমাদের খাদ্য প্রয়োজন। শিশুদের জন্য সর্বপ্রথমে প্রয়োজন পুষ্টি দায়ক খাবার। আমরা যাকে বলি সুষম খাবার। কারণ শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে প্রয়োজন পুষ্টির। আর এই পুষ্টির চাহিদা পূরণে জন্য তার প্রয়োজন পরিমানমত আমিষ ও ভিটামিন জাতীয় খাবার।   

মাছ, মাংশ, ডিম, দুধ শিশুদের দৈহিক বিকাশে যেমন সহায়তা করে তেমনি মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রখে। আবার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তির জন্য এবং ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য শিশুর খাদ্য তালিকায় টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল রাখা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে শিশুর পুষ্টির অভাব হলে তার মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্থ হবে। 


শিশুর মানসিক বিকাশে ধর্মীয় শিক্ষা

আমাদের প্রত্যেক পিতামাতার উচিত শিশুদের লেখা পড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া।  কারণ ধর্মভীরু মানুষের দ্বারা খারাপ কাজ সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিশুরা যখন ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষত হবে তখন তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ  তৈরি হবে। 

তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রখতে পারবে। পরকালে আমাদের সকল ভাল মন্দ কাজের হিসেব দিতে হবে এই শিক্ষা যখন শিশুদের মধ্যে চলে আসবে তখন তারা সকল ধরনের খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখবে। 

           

শিশুদের মানসিক বিকাশে আনন্দ ভ্রমণ

মানুষ মাত্রই ভ্রমণ প্রিয় হয়ে থাকে। শিশুরা ঘুরে বেড়াতে আনন্দ পায় বেশী। এতে তারা অনেক কিছু শিখতে পারে। তারা বিভিন্ন ধরনের নতুন  নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ লাভে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত শিশুদের নিয়ে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া।

কথায় বলে যতই দেখিবে ততই শিখিবে। আমরা যদি আমাদের শিশুদের মানসিক বিকাশ চাই তাহলে লেখা-পড়ার পাশাপাশি তাদেরকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নিয়ে দেখানো। এতে তারা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে জানতে পারবে। 

পরিশেষে আমার মতামতঃ

শিশুদের মানসিক বিকাশ হবে কিভাবে তা আমরা জানতে পারলাম। তাইতো গানের কথায় বলতে চাই “শিশুর জন্য ভালবাসা কর তোমরা অনুভব চাই  বাঁধা বন্দন মুক্ত আনন্দময় শৈশব”। হ্যাঁ পাঠক আমরাই পারি আমাদের শিশুদের আগামী দিনের যোগ্য,মেধাবী ও সুস্থ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে। 

পাঠক, পরিশেষে বলতে চাই আমার এই লেখা পড়ে আপনার যদি সামান্যতম উপকার হয় তাহলে আমার কষ্ট সার্থক হবে বলে আমি মনে করি। কোন মতামত থাকলে লিখতে পারেন নিচের কমেনন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url