সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে

সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে যেমন সুষম খাবার প্রয়োজন, তেমনি খেলাধূলা ও নিয়মিত শরীরচচা ও প্রয়োজন। মেশিনে যেমন শুধুমাত্র তেল দিলে হয়না মবিলের ও প্রয়োজন হয়। তেমনি আমাদের দেহে শুধুমাত্র খাবার দিলে হয়না শরীর কে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচচা। শরীরচচার মধ্য সবচেয়ে সহজ হচ্ছে হাটা । এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলা যেমন - ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল বেডমিন্টন ইত্যাদি। তাছাড়া খেলাধূলা করলে মন ও ভাল থাকে। । 

আমাদের যুব সমাজের মেধা বিকাশের জন্য লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধূলারও প্রয়োজন। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে বেড়ে উঠার জন্য তাদেরকে লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধূলারও সুযোগ দিতে চাই এটাই হোক আমাদের আগামীর অঙ্গীকার। আপনি যদি এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনিও পারবেন নিজেকে সুস্থ রাখতে। নিচে আমরা সুস্থ থাকার উপায় জানব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে  

ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস

সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে আমাদের প্রথমে যে,কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। ঘুম থেকে উঠারপর টয়লেট সেরে দাঁত মেজে সকালের প্রার্থনার কাজ শেষ করতে হবে। কিছু হালকা ব্যায়াম করতে হবে। এরপর ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে। তারপর খালি পেটে ১-২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এর পর সকালের নাস্তা সারতে হবে।

ছাত্র/ছাত্রীরা পড়া-লেখা করতে বসবে এবং চাকুরীজী বা ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করব। একটি কথা মনে রাখতে হবে দিনের সকালটা যদি ভাল কাটে তাহলে আশা করা যায় দিনটি ভাল কাটবে।কর্মস্থলে যাওয়ার পর আজকের সারা দিনের কাজের তালিকা তৈরি করতে হবে। সে অনুযায়ী দিনের কাজ শুরু করেত হবে। কাজের ধরন বুঝে অতি প্রয়োজনীয় কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম


প্রতিদিন কিছু হালকা ব্যয়াম করার অভ্যাস

সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত প্রতিদিন সকালে কিছু হালকা ব্যয়াম করা। যেমন ধরুন জগিং, বুকডন, হাঁটা ইত্যাদি । সবচেয়ে ভাল ব্যয়াম হচ্ছে হাঁটা চলা করা। কারণ হাঁটার সময় মানুষ প্রকৃতির খুব কাছে চলে আসে ফলে মানুষের মনের ভিতরে একটি উৎফুল্ল ভাব তৈরি হয়। মনও ভাল থাকে। যাদের হাতে সময় কম থাকে, তাদের জন্য খোলা ছাদে খালি হাতে কয়েকটি হালকা ব্যায়াম করতে পারেন ।

বুকডন, সাইকিলিং, দড়িলাফ ইত্যাদি ব্যয়ামগুলো আমরা করতে পারি খুব সহজে। এছাড়াও রিং বেঁধে ঝোলা, ডাম্বেল উঠানো এই ব্যায়ামগুলো করলে আমাদের সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন তৈরিতে সাহায্যে করে।তাই আমাদের সকলের উচিত নিজের শরীরকে ঠিক রাখতে সারা দিনের কিছুটা সময় বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা করা। প্রতিদিনের কিছুটা সময় হালকা ব্যয়ামের জন্য ব্যায় করলে আমরা শরীর ভাল রাখতে পারব।  


সকালের নাস্তা সময়মত করার অভ্যাস 

আমাদের মধ্য অনেকেই আছে যারা সকালে নাস্তা করতে চায়না। আবার, অনেকে সকালে শুধুমাত্র চা বিস্কুট খেয়ে থাকে। আমরা যখন যানবাহনে চলাচল করি, তখন একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ড্রাইভার যাত্রার শুরুতেই প্রথমেই তেলের ট্যাংক লোড করে নেন । আমরা যদি প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ভাল ভাবে নাস্তা করে বের হই তাহলে দিনের শুরুটাই ভাল হবে।

আমার এক বন্ধুর বস্ ছিল বৃটিশ লোক, সে প্রতিদিন সকালে সাইড দেখতে বের হওয়ার সময় আমার বন্ধুকে বলতেন এই ভাল করে পেট লোড করে নে, যেন দুপুর ১২টা পযর্ন্ত ক্ষুদা না লাগে। আপনি যদি সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভাল ভাবে নাস্তা করে বের না হন, তাহলে আপনার কাজের মধ্যে ক্ষুদা লাগবে আর আপনি কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়বেন।     

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন সকালের নাস্তার আদর্শ খাবার


প্রচুর পরিমানে পানি পান করার অভ্যাস

আমাদের শরীরের রক্তের ৭০% পানি। তাহলে ভেবে দেখুন পানি আমাদের জীবনের জন্য কত প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৭ লিটার পানি প্রয়োজন। পানি আমাদের খাদ্য হজম করতে সাহায্যে করে। খাদ্য গ্রহনের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা হয় না। পনি আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দেয়।

সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে প্রতিদিন সকালে আপনি খালিপেটে ১ গ্লাস পানি পান করুন, আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে না। পানি শূন্যতায় মানুষের মৃত্য পযর্ন্ত ঘটতে পারে। তাইতো বলা হয় বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। পনি আমাদের দেহের পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করে। পনির কারণে আমাদের পরিপাক তন্তু সঠিকভাবে কাজ করে। পানি আমাদের শরীর থেকে বজ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্যে করে। পানি কোষ্ঠকাঠিন্ন দূর করতে সাহায্যে করে।


প্রতিদিন সময়মত খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস

সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে খাদ্য গ্রহনের সময় মেনে চলা আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আমরা অনেকেই সময় মেনে খাদ্য গ্রহন করিনা বা জানিনা তিনবেলা খাবার খাওয়ার সময়। ফলে আমাদের শরীর খাদ্য গ্রহনের সুফল পায় না। সকালের নাস্তা ৮টার মধ্যে করতে হবে। দুপুরের খাবার ১টা থেকে ২টার মধ্যে করতে হবে। রাতের খাবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে করতে হবে।

আমরা অনেকেই সকালের নাস্তা খাই দেরি করে। আবার দুপুরের খাবার গ্রহনের সময়ও ঠিক থাকে না । আমরা অনেকেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, কিন্তু রাতের খাবার খাওয়ার পর অন্তত ২ ঘন্টা পর ঘুমাতে যাওয়া উচিত। খাদ্য এমনি একটি উপাদান যা আমাদের দেহের জন্য কম খেলেও খারাপ শরীর দূবল হয়ে পড়বে, আর বেশী খেলে শরীরে মেদ জমা হয়ে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।


সুষম খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস 

আমাদের খাদ্য উপাদান হচ্ছে ৬টি । শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, স্নেহ বা চর্বি, খনিজ লবণ ও পানি। পরিমিত পরিমানে এই ৬টি উপাদান খাদ্য থাকলে তাকে সুষম খাদ্য বলে। শর্করা আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। শর্করা জাতীয় খাদ্য হল- ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি। আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধি ঘটায়। এইজন্য বাচ্চাদের আমিষ একান্ত জরুরি। আমিষ জাতীয় খাবার গুলো হল- মাছ,মাংশ,ডিম,দুধ ইত্যাদি।

ভিটামিন হচ্ছে সেই খাবার যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্যে করে। টাটকা শাক-সব্জি, ফলমূলে ভিটামিন থাকে। ভিটামিন যুক্ত খাবার টাটকা অথবা অল্প আঁচে রান্না করতে হয়। স্নেহ বা চর্বি আমাদের দেহে তাপ শক্তি উৎপন্ন করে। খনিজ লবণ শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে আর পানি আমাদের শরীর সতেজ রাখতে সাহায্যে করে। পানি ছাড়া আমাদের জীবন বাচাঁনো কোন ভাবেই সম্ভব না। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে আমাদের সুষম খাবার গ্রহন করতে হবে।

পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস

পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ঈমানের অঙ্গ। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে আমরা বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। এক গবেষনায় দেখা যায়,শুধু মাত্র হাত পরিস্কার রাখলে আমরা ৭০ ভাগ অসুখের হাত থেকে বাঁচতে পারি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শুধুমাত্র পোশাক আশাকে থাকলে হবে না। বাড়ি-ঘর চারপাশের পরিবেশ সবকিছুই পরিস্কার পরিচন্ন রাখা চাই। নিয়মিত সাবান ও শ্যাম্প ব্যবহার করে গোসল করা।


হাত-পায়ের নখ, চুল-দাড়ি কাটা ইত্যাদি কাজ গুলোর মাধ্যমে আমরা ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে নিজের কাছে যেমন ভাল লাগে তেমনি আপনার চারপাশের মানুষজন ও খুশি থাকে। নোংরা অপরিস্কার থাকলে আমরা যে সকল রোগে আক্রান্ত হই তার মধ্যে চর্মরোগ ও ডায়রিয়া সাধারণত বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকি।

নিয়মিত খেলাধূলা করার অভ্যাস

খেলাধূলা করলে আমাদের মন ও স্বাস্থ্য উভয়েই ভাল থাকে। আজকালকার বাচ্চারা মোবাইলের প্রতি বেশী আগ্রহী হয়ে যাওয়ার ফলে তারা খেলা-ধূলা করে না। যার ফলে তারা দিন দিন স্থলকায় ও দূর্বল হয়ে পড়ছে। আবার তরুন সমাজ বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার ফলে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবনতা দিন দিন বেরেই চলেছ।


এর থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাইলে আমাদের সন্তানদের খেলা-ধূলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। আজকাল শহর অঞ্চলে আমরা আর মাঠ দেখতে পাইনা শুধু বড় বড় দালান। বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। আগামীর প্রজন্ম কে মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে বের করে এনে আবার আগের মত খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে তাহলেই আমরা পাব সুস্থ, সুন্দর ও সুখি একটি দেশ।


নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যাস

আমরা অনেকেই আছি যারা খুব কম বিশ্রাম নেই। আমাদের শরীর ভাল রাখার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের শরীর ও ব্রেন কে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন। নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম না নিলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। এক গবেষনায় দেখা যায় যারা নিয়মিত রাত জাগে তাদের ক্যান্সারের ঝুকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।

তাই আমাদের উচিত শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো। ঘুমের মাধ্যমে আমাদের শরীর পরবর্তী দিনের কাজের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠে। তাই আমরা যদি সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই তাহলে বিশ্রাম একান্ত প্রয়োজন। আমরা যখনই একসাথে অনেক কাজ করতে চাই তখন শরীরের উপর চাপ বেশী পরে যায়। তাই আমরা যদি দীর্ঘক্ষন কাজ করি তাহলে কজের মাঝে কিছুক্ষণ করে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এতে কাজের গতি বারে।

প্রতিদিন রাতে সময়মত ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস

সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিন দিয়েছেন কাজ করার জন্য আর রাত বিশ্রামের জন্য। আজকাল মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট আর সোসাল মিডিয়ার বিভিন্ন ধরনের প্লাটফর্মের কারনে আমরা রাত জেগে এইগুলো ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা নিজেরা বুঝতে পারিনা আমরা নিজেদের কতবড় ক্ষতি করে ফেলি। যখন বুঝতে পারি তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে আর রি-কভারি করার সময় থাকেনা।

রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় ১১ টা। আমাদের প্রত্যকেই উচিত রাত ১১ টা মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাওয়া। তাহলেই পারব সুস্থ থাকতে। যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পরি তখন আমাদের ঘুম আসে। আমরা যদি আমাদের শরীরকে বিশ্রাম না দেই তাহলে আমাদের শরিীরক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন কি মানুষ ঘুম বা বিশ্রারমর অভাবে পাগল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

    পরিশেষে আমার মতামতঃ

পরিশেষে বলতে চাই সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন চাইলে নিজেকে রোগ-বালায়ের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে চাই তাহলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই দশটি টিপস্ মেনে চলা। উপরোক্ত দশটি টিপস্ মেনে চললে আশা করা যায় আমরা আমাদের জীবণকে আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারব।

পাঠক, পরিশেষে বলতে চাই আমার এই লেখা পড়ে আপনার যদি সামান্যতম উপকার হয় তাহলে আমার কষ্ট সার্থক হবে বলে আমি মনে করি। কোন মতামত থাকলে লিখতে পারেন নিচের কমেনন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url